ঢাকা শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পাবনায় সড়কের কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার 

পাবনায় সড়কের কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার 

পাবনায় একটি সড়কের সংস্কার কাজ শুরুর কিছুদিন পরেই কাজ ফেলে লাপাত্তা হয়েছেন ঠিকাদার। কাজ বন্ধের ছয় মাস হয়ে গেলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে কোনো উদ্যোগ নেই নাই বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। ফলে জেলার চাটমোহর উপজেলার হাণ্ডিয়াল-হামকুড়িয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ১২ কিলোমিটারে জনদুর্ভোগের শেষ নেই।

প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে এ পথ দিয়ে কয়েক লাখ মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে। তবে পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু না করলে কাজ বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনা সদর, আটঘরিয়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়াসহ কয়েকটি উপজেলার সঙ্গে ঢাকায় যোগাযোগের বিকল্প পথ হিসেবে হাণ্ডিয়াল-হামকুড়িয়া আঞ্চলিক মহাসড়কটি ব্যবহৃত হয়। এ পথ ব্যবহার করে এসব উপজেলায় বাসিন্দাদের ঢাকায় যেতে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হয়।

এ ছাড়া চলনবিল থেকে মাছ ও কৃষিপণ্য পরিবহনেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি। বর্তমানে সংস্কার বন্ধ থাকায় সড়কজুড়ে খানাখন্দ ও অসংখ্য ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও চলাচলকারীদের অভিযোগ, ঠিকাদার ও সড়ক বিভাগের গাফিলতির কারণে লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কাজ শুরু হলেও ৫ অগাস্টের পর থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে।

পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাটমোহর থেকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার দূরত্ব। সড়কটির ১২ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সড়ক বিভাগ। চাটমোহর বাজারের জার্দিস মোড় থেকে হাণ্ডিয়াল পর্যন্ত সড়কটির সংস্কারকাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিরাজগঞ্জের ‘টুর্ণা এন্টারপ্রাইজ’। গত বছরের জুলাইয়ে সংস্কারকাজ শুরু হয়। এ বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ১০ ভাগ কাজও হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তার বিশেষ ব্যবস্থায় কাজটি পায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে এ কাজের বিলের কিছু টাকাও উত্তোলন করেছে ঠিকাদার। সড়ক বিভাগ কেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, তা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, জার্দিস মোড় থেকে শুরু করে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কের পুরোনো কার্পেটিং তুলে ফেলা হয়েছে। সড়কের দুই পাশে বেইজ ওয়াল নির্মাণ করে রাস্তায় ফেলা হয়েছে বালু ও পাথর। এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে কাজ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে চলাচলকারীরা।

শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় ধুলাবালির কারণে রাস্তায় চলাচল করা দুরূহ হয়ে উঠছে। পাশাপাশি সড়কের পাশের বাসিন্দাদের বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে। পথচারী হাসান আলী বলেন, “সড়কের কাজ শুরু দেখে ভাবলাম কষ্টের দিন শেষ হবে, দুর্ভোগ লাগব হবে। কিন্তু এখন দেখছি আগের ভাঙ্গাচোরা রাস্তাই ভালো ছিল।”

সড়কের পাশের বাসিন্দা আল মামুন বলেন, “রাস্তার কাজ শুরু হওয়ায় মনে সান্ত¡না পেয়েছিলাম। এখন কাজ বন্ধ থাকায় চরম দুর্বিষহ সময় অতিবাহিত করতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে রাস্তায় পানি ছিটিয়ে ধুলা কমার চেষ্টা করেও পারছি না। “জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে যদি একবেলা আমার বাড়িতে রাখতে পারতাম, ‘ব্যাটা’ বুঝতে পারত আমাদের কষ্টের কথা। উনি তো এসি রুমে ‘কমিশন’ পেয়ে আরাম-আয়েশে সময় পার করছেন। আমাদের কথা একবারের জন্যও চিন্তা করছেন না।” ট্রাকচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। ছোট-বড় গর্ত আর ধুলাবালির জন্য চলাচল করতে খুব সমস্যা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘টুর্ণা এন্টারপ্রাইজের’ কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি সড়ক বিভাগের কাছে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর চেয়েও পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ অস্বীকার করে পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, “কয়েকবার সতর্ক করার পরও ঠিকাদার কাজ শুরু করেননি। শেষবারের মত ঠিকাদারকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু না করলে, কাজ বাতিলের সুপারিশ করা হবে।”

লাপাত্তা,ঠিকাদার
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত